বাসর রাতে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা কোনদিন আমি করিনি।
বাসর রাতে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা কোনদিন আমি করিনি। আমার স্বামী
শিশিরের সাথে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ এসে কেউ দরজায় টোকা দিলো। শিশির দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকলো তার ছোট চাচীর মেয়ে অর্নি।অর্নি এসেই আমার পায়ে পড়ে গেল।আর কাঁদতে লাগলো।
আমি বললাম,'কী হলো তোমার! আরে এমন করছো কেন তুমি?'
অর্থি কাঁদতে কাঁদতে বললো,'ভাবী, আপনি আমার সর্বনাশ করবেন না প্লিজ! শিশির ভাইয়াকে আপনি ডিভোর্স দিয়ে দিন!'
আমি বড়ো অবাক হয়ে বললাম,'কী বলছো এসব অর্নি? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?'
'মানে?'
অর্নি আবার কাঁদতে শুরু করলো আমার পা শক্ত করে ধরে।আমি এবার শিশিরের দিকে তাকালাম। বললাম,'ও এমন করছে কেন?ওর কী সমস্যা হয়েছে?'
শিশির বোকার মতো তাকিয়ে আছে।কী করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না!
আমি অর্নির দুটো হাত ধরে বললাম,'অর্নি, তোমার কী হয়েছে খুলে বলো প্লিজ!'
অর্নি কাঁদতে কাঁদতে বললো,'শিশির ভাইয়ার সন্তান আমার পেটে!এই দেখো হাত দিয়ে দেখো তুমি!'
অর্নি আমার হাতটা টেনে নিতে চাইলো তার তলপেটের কাছে। কিন্তু আমি এক ঝটকায় ওর কাছ থেকে সরে গিয়ে খাটের এক পাশে বসে আতংকিত চোখে তাকালাম শিশিরের মুখের দিকে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'শিশির,এই শিশির,ও কী বললো তোমার কথা? তুমি আমার সর্বনাশটা কেন করলে? কেন?'
শিশির হতভম্বের মতো আমার দিকে তাকিয়ে বললো,'না।ও মিথ্যা বলছে!'
অর্নি এবার শিশিরের কাছে গিয়ে ওর একটা হাত ধরলো। তারপর বললো,'কেন মিথ্যে বলছো তুমি? আমার সবকিছু শেষ করে দিয়ে কেন এখন অস্বীকার করছো? তুমি না কুরান শপথ করে বলেছিলে, আমায় ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। তোমার এই কথা মেনেই তো আমি তোমার কাছে আমাকে সপে দিয়েছিলাম।আর তুমি কি না এখন সবকিছু অস্বীকার করছো?'
কথাগুলো বলে আবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অর্নি।
শিশিরের চোখ দেখা গেল এবার লাল টুকটুকে হতে।সে তার লাল চোখ নিয়ে এগিয়ে এলো অর্নির কাছে। তারপর অর্নির চুল টেনে ধরে বললো,'বের হয়ে যা বলছি আমার ঘর থেকে। অসভ্য মেয়ে!'
শিশিরের এমন আচরণ আমার মোটেও সহ্য হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে আমি বিছানা থেকে নেমে এসে শিশিরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর গাল খসে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম,'লজ্জা করে না তোমার এসব করতে?একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়ে এখন তাকে ঘর থেকে চুল টেনে ধরে বের করে দিচ্ছো!কী ভেবেছো তুমি নিজেকে?আমি সবকিছু দেখে সহ্য করবো?মেনে নিবো যে তুমি সৎ ছেলে আর অর্নি মিথ্যুক,দুশ্চরিত্রা?না কখনোই না!'
শিশিরের মুখটা হঠাৎ অসহায়ের মতো দেখালো।
এই সুযোগে অর্নি তার কোমরের গিঁট থেকে বিষের একটা শিশি বের করে ফেললো।আর সেই শিশি সামনে ধরে বললো,'আমাকে তাড়িয়ে দিলে আমি বিষ খেয়ে সোইসাইড করবো। এমনিতেও তো আমার সবকিছু শেষই। আমি মরে গেলে তো কারোর কিচ্ছু যায় আসে না।তাই মরে যাওয়ায় ভালো!'
শিশির এবার বেশ বিপাকে পড়েছে।ওর মুখটা কেমন শুকিয়ে মরা গাছের পাতার মতো হয়ে গেছে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে এবার বললাম,'কী এখন মুখটা একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কেন?যখন একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিলেন তখন মনে পড়েনি এমন ঘটনা ঘটতে পারে?বাই দ্যা ওয়ে,অর্নিকে তুমি বিয়ে করবে।আর আমি আগামীকাল চলে যাবো এ বাড়ি ছেড়ে। কিন্তু তোমায় এখানে রেখে নয়।জেলে দিয়ে!'
শিশির যেন এবার কেঁদে ফেলবে।সত্যি সত্যি তার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো গালের উপর।সে এবার দাঁড়ানো থেকেই ধপ করে বসে পড়লো মাটির উপর। তারপর হাঁটুর ভেতর মাথা গুঁজে দিয়ে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো।
অর্নি দ্রুত গিয়ে জড়িয়ে ধরলো শিশিরকে।সে তার ভেজা গলায় বললো,'তুমি কেঁদো না প্লিজ! তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না! এই দেখো আমি বিষের শিশি ফেলে দিচ্ছি।'
বলে অর্নি বিষের শিশিটা এক ঢিলে ছুঁড়ে মারলো সামনের দিকে।আর শিশি ভেঙে গিয়ে ভেতরের সবটুকু তরল বিষ গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে।কী দুর্গন্ধ সেই বিষের! সেই গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বমি পাচ্ছে!মাথা কেমন ঘুরছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমি পড়ে যাবো।
অর্নি এসে তৎক্ষণাৎ আমায় ঝাপটে ধরলো।তার বুকের উপরেই আমার অসাড় দেহটা আটকে থাকলো!
No comments